নদী ভাঙ্গনের কবলে দাকোপ
বি এম রাকিব হাসান, খুলনা বিশেষ প্রতিনিধি : খুলনা জেলার দাকোপে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে কয়েকটি স্থান মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলি মেরামত না করলে যে কোন সময়ে বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হয়ে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ভৌগলিক অবস্থানের কারনে পৃথক তিনটি দ্বীপের সমন্বয় এ উপজেলা গঠিত। এখানে প্রায় সারা বছরই চলে নদী ভাঙ্গন। স্থানীয় বাসিনন্দারা ভাঙ্গনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত তাদের সহায় সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। শুধুমাত্র নদী ভাঙ্গনের কারনে সর্বস্ব হারিয়ে অনেকে ভারতেও চলে গেছে এমন সংখ্যা কম হবে না। উপজেলার চারপাশ জুড়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদীর মধ্যে শিবসা, ঢাকী, চুনকুড়ি, পশুর, ঝবঝপিয়া ও মাঙ্গা নদীর ভাঙ্গন এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য। যে কারনে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে এ উপজেলার মানচিত্র। সংশ্লিষ্ট জন প্রতিনিধিরা জানান, বর্তমানে উপজেলার কয়েকটি স্থানে নদী ভাঙ্গন মারাত্মক আকার ধারন করেছে। এসব স্থানের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাগণ ভাঙ্গন কবলিত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলি মেরামতের প্রতিশ্রতি দিলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় দিন দিন ওই সব স্থানের জনসাধারণ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলি হল পানখালী ইউনিয়নের খলিসা গেটের পূর্ব পাশে, ফেরীঘাটের পূর্ব পাশে, খোনা ইট ভাটার সামনে। তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বৈদ্যনাথ গাইনের বাড়ির দণি পাশে, গোবিন্দ স্কুল ও পুলিশ ফাঁড়ির সামনে, ঝালবুনিয়ার খেয়াঘাটের উত্তর পাশে, বটবুনিয়া শিকারী বাড়ির সামনে। সুতারখালী ইউনিয়নের গুনারী কালি বাড়ি, মন্টু বৈদ্যের বাড়ির পশ্চিম পাশে, নলিয়ান
দিচ্ছি, তাও যথেষ্ট নয়। আমি প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ন ভেড়িবাঁধগুলো পরিদর্শন করছি।
এ বিষয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের কোন কিছু করার নেই, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাঁধের কাজ চলছে কিন্তু এখনো তাদের এসব স্থানে কাজ করতে প্রায় দুই বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তাছাড়া উদ্ধর্তন মহলে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পিযুষ কান্তি কুন্ডু বলেন, মেরামতের জন্য চাহিদা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ আসলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে কাজ শুরু করা হবে।
বাজার ও ফরেস্ট অফিসের সামনে, কালাবগী মঙ্গলবার বাজার সংলগ্ন মোস্তফার বাড়ির সামনে, আবুল মেম্বরের বাড়ির সামনে, বৃহস্পতিবার বাজার, কালাবগী শশি ভূষনের ডাক্তারের বাড়ির সামনে ও মালেক সাহেবের হ্যাচারীর সামনে, সুতারখালী মলিক বাড়ির সামনে ও এমপি মাহবুব আলম হানিফের হ্যাচারীর সামনে। কামারখোলা ইউনিয়নের জালিয়াখালী, পার জয়নগর বাজার সংলগ্ন, পশ্চিম শ্রীনগর ও কামাখোলা এলাকায়। বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি খেয়াঘাটর ও পোদ্দারগঞ্জ বাজার সংলগ্ন। বানিশান্তা ইউনিয়নের বানিশান্তা বাজার, পূর্ব ঢাংমারী খ্রিস্টান বাড়ি ও ভোজনখালী গেট সংলগ্ন। দাকোপ ইউনিয়নের পোদ্দারগঞ্জ বাজার ও সাহেবের আবাদ লঞ্চঘাট সংলগ্ন এবং কালি নগর খেয়াঘাট সংলগ্ন। কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের রাম নগর বাজার ও বুড়ির ডাবর রবি মেম্বরের বাড়ির সামনে। চালনা পৌরসভার নলোপাড়ার পূর্ব পাশে। এ সকল ঝঁকিপূর্ণ স্থানগুলির ওয়াপদা ভেড়িবাঁধের এক তৃতীয়াং নদী গর্ভে বিলিন হলেও মাত্র কয়টি স্থানে সংশিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবকদের সহায়তায় এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত ও বিকল্প বেড়িবাঁধের কাজ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয় বলে এলাবাসীর অভিযোগ। অতি দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলি মেরামত বা বিকল্প মজবুত বেড়ি বাঁধ না দিলে আগামী আমাবশ্যা বা পূর্ণিমার গোনে ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশংঙ্কা করছে সংশিষ্ট জন প্রতিনিধিরা।
বটবুনিয়া এলাকার গোপাল চন্দ্র সরদারের ছেলে লাবণ্য সরদার বলেন, নদী ভাঙ্গনে প্রথমে আমার তিন বিঘা জমিসহ বাড়ি ঘর বিলিন হয়ে গেছে। পরে একটু ভিতরে বিকল্প ভেড়ি বাঁধের গায়ে নতুন বাড়ি করেছিলাম, বর্তমানে সেখানেও ভাঙ্গন লেগেছে। আমরা খুব ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছি। তার মতো যদুবর সরদারসহ আরো অনেকে একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
দাকোপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন জানান, প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনে ভেঙ্গে যাচ্ছে আর আমরা নিজেদের এবং কিছু অনুদানের টাকা খরচ করে কোন রকম ভেড়িবাঁধ মেরামত বা বিকল্প বাঁধ